পরিচয়
হযরত উসমান (রা.) ৫৭৩ খ্রিষ্টাব্দে মক্কার কুরাইশ বংশের উমাইয়া গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আফফান, মাতার নাম ছিল ওরওয়াহ। ইসলামের চার খলিফার মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয় খলিফা। বাল্যকাল থেকেই তিনি নম্র, ভদ্র, লজ্জাশীল ও বিনয়ী ছিলেন। তাঁর চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে রাসুল (স.) তাঁর প্রথম কন্যা বুকাইয়াকে তাঁর নিকট বিবাহ দেন। বুকাইয়া মারা গেলে অতঃপর উম্মে কুলসুমকে তাঁর কাছে বিবাহ দেন। ফলে তাঁকে 'যুন্নুরাইন' (দুই নুরের অধিকারী) বলা হতো। তিনি ব্যবসা করতেন বিধায় তাঁর অনেক সম্পদ ছিল। তাই তাঁকে 'গণি' (ধনী) বলা হতো। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কারণে তাঁর চাচা হাকাম তাঁকে অনেক নির্যাতন করে। তাঁর নিকটাত্মীয়রাও নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দিলে তিনি তাঁর সত্রী রুকাইয়াসহ আবিসিনিয়ায় হিজরত করেন।
ইসলামের সেবা
হযরত উসমান (রা.) ইসলাম গ্রহণের পর সর্বদা ইসলাম প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি সর্বদা রাসুল (স.)-এর সাথে থাকতেন। এ কাজে তিনি তার সম্পদ উদার হস্তে ব্যয় করেন। তিনি নিজ খরচে মসজিদে নববি সম্প্রসারণ করেন। মদিনায় দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করেন। তাবুক যুদ্ধে তিনি দশ হাজার দিনার (মুদ্রা) ও এক হাজার উষ্ট্র মুসলিম সেনাবাহিনীকে দান করেন।
খিলাফত লাভ ও কুরআন সংকলন
হযরত উসমান (রা.) ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে খলিফা নির্বাচিত হলেন। অতঃপর তিনি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি সম্পাদনের পাশাপাশি পবিত্র কুরআন সংকলনে হাত দেন। মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তৃত হলে বিভিন্ন এলাকার লোকজন পবিত্র কুরআন বিভিন্নভাবে তিলাওয়াত করতে লাগল। ফলে মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিল। তিনি এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার গুরুত্ব উপলব্ধি করলেন। রাষ্ট্রীয় নির্দেশ জারি করে তখনকার সময়ে বিদ্যমান পবিত্র কুরআনের সকল কপি সংগ্রহ করলেন। হযরত হাফসা (রা.)-এর নিকট সংরক্ষিত পবিত্র কুরআনের মূল কপিটি সংগ্রহ করার মাধ্যমে কুরআন সংকলনের কাজ সমাপ্ত করেন। অতঃপর মুসলিম জাহানের গভর্নরদের নিকট একটি করে কপি পাঠান। অবশিষ্ট সংগৃহীত কপিগুলো আগুনে পুড়িয়ে দিলেন। পবিত্র কুরআনকে মূল ভাষা অনুযায়ী সংকলন করার ফলে তাঁকে 'জামেউল কুরআন' (কুরআন সংকলক) বলা হয়। হযরত উসমান (রা.) দীর্ঘ ১২ বছর খিলাফতের দায়িত্ব পালন করেন। অবশেষে ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ৮৩ বছর বয়সে কতিপয় বিদ্রোহীর হাতে শাহাদতবরণ করেন। তাঁর ব্যাপারে রাসুল (স.) বলেছেন- 'প্রত্যেক নবিরই একজন বন্ধু রয়েছে, জান্নাতে আমার বন্ধু হবেন উসমান।'
হযরত উসমানের রাষ্ট্র পরিচালনা
হযরত উসমান (রা.) ৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত খিলাফতে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তাঁর আমলে ইসলামী খিলাফত ব্যাপক বিস্তৃত হয়। পশ্চিমে মরক্কো, পূর্বে বর্তমান পাকিস্তানের দক্ষিণ-পূর্ব এবং উত্তরে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান পর্যন্ত তা বিস্তার লাভ করে। তাঁর সময়ে সর্বপ্রথম মুসলিম নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠিত হয়, প্রশাসনিক বিভাগসমূহ সম্প্রসারিত হয় এবং কল্যাণমূলক বহু কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়।
তিনি অনেকগুলো অর্থনৈতিক সংস্কার সম্পাদন করেন, যাতে করে মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা নিশ্চিত হয়। তিনি হযরত ওমর (রা.) কর্তৃক প্রবর্তিত ভাতা প্রায় ২৫ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেন। তাঁর সময়ে ব্যবসায়-বাণিজ্যে প্রভুত উন্নতি সাধিত হয়। তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেন, বাজার পরিদর্শক কর্মকর্তা নিয়োগ করেন, কৃষি উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রদেশে প্রশাসক নিয়োগ করেন।
খলিফা হিসেবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে তিনি নিজের জন্য কোনো বেতন-ভাতা গ্রহণ করতেন না। তাঁর প্রথম ৬ বছরের শাসন আমল শান্তিপূর্ণ ছিল এবং খুলাফায়ে রাশেদিনের মধ্যে তিনি সর্বাধিক জনপ্রিয় ছিলেন।
দলগত কাজ: শিক্ষার্থীরা প্রত্যেকে হযরত উসমান সম্পর্কে লেখাটি পাঠ করে শ্রেণিতে দলগতভাবে আলোচনা করবে। |
বাড়ির কাজ: ইসলামের কল্যাণে হযরত উসমান (রা.)-এর অবদানসমূহ উল্লেখ কর। |
Read more